Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

আয় বাড়াতে কাঁকড়া চাষ

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী উপাদানগুলোর মধ্যে কাঁকড়ার অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ দেশের রপ্তানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার স্থান। আমাদের দেশে বর্তমানে উৎপাদিত কাঁকড়ার পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও কাঁকড়া রপ্তানি থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে।  প্রজাতিভিত্তিক মিঠা ও লোনা পানির উভয় পরিবেশে কাঁকড়া বেঁচে থাকে। মিঠা পানির কাঁকড়া আকারে ছোট এবং লোনা পানির কাঁকড়া আকারে বেশ বড় হয়। এ দেশের প্রাপ্ত সর্বমোট ১৫টি প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে ৪ প্রজাতির সাধু বা মিঠা পানির কাঁকড়া এবং ১১টি প্রজাতি সামুদ্রিক। সামুদ্রিক প্রজাতির কাঁকড়ার মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁকড়া হলো ম্যাডক্র্যাব। এটি অন্যান্য প্রজাতির কাঁকড়ার তুলনায় আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে। সেন্টমার্টিন ব্যতীত কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় নদীগুলো এবং মহেষখালী, কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, দুবলারচর এলাকা, উপকূলীয় চিংড়ির খামার, সমুদ্রের মোহনা, নদী এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল (সুন্দরবন) অঞ্চলে কাঁকড়ার বিস্তৃতি দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়া উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ির খামারে একই পরিবেশে বাগদা চিংড়ির সাথে বড় হয়ে থাকে। চিংড়ির খামারে অবাঞ্ছিত প্রাণী হিসেবে উৎপাদিত কাঁকড়া বিগত কয়েক বছর ধরে চিংড়ির মতো বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ায় উপকূলবাসীর মধ্যে কাঁকড়ার চাষ সম্পর্কে গভীর আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কাঁকড়া পরিকল্পিতভাবে চাষ করা উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মাঠ পর্যায়ে আমাদের দেশে এখনও ব্যাপকভাবে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়নি।
কাঁকড়া চাষের প্রধান সুবিধাগুলো
০ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া চাষের পরিবেশ বিদ্যমান;
০ আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা থাকায় এর উৎপাদন লাভজনক;
০ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক পোনা (কিশোর কাঁকড়া) পাওয়া যায়;
০ কাঁকড়ার খাবার স্বল্পমূল্যে সংগ্রহ করা যায়;
০ ওজন হিসেবে কাঁকড়ার বাড়বাড়তির হার বেশি;
০ কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়;
০ কাঁকড়া পানি ব্যতীত অনেকক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে এবং প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে;
০ পচা আর্বজনা খেয়ে পরিবেশ বিশুদ্ধ করে।
কাঁকড়া চাষের উপযুক্ত পরিবেশ
বাগদা চিংড়ির মতো কাঁকড়া উপকূলীয় লবণাক্ত পানিতে চাষ করা যায়। কাঁকড়া চাষের মাটি ও পানির গুণাবলি নিম্নরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মাটির গুণাবলি
০ নরম দো-আঁশ বা এঁটেল মাটি;
০ হাইড্রাজেন সালফাইড ও এমোনিয়া গ্যাসযুক্ত মাটি;
০ জৈব পদার্থ ৭% থেকে ১২%;
০ এসিড সালফেটমুক্ত মাটি;
০ হালকা শ্যাওলা ও জলজ আগাছামুক্ত পরিবেশ।
পানির গুণাবলি
০ লবণাক্ততা : ১০-২৫ পিপিটি
০ তাপমাত্রা   : ২৫-৩২ সে.
০ পিএইচ      : ৭.৫-৮.৫
০ অ্যালকালিনিটি  :  ৮০ মিগ্রা/লি.
০ হার্ডনেস : ৪০-১০০ পিপিএম
০ দ্রবীভূত অক্সিজেন  : ৪ পিপিএমের ঊর্ধ্বে
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি
কাঁকড়ার জন্য দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো। পুকুরের আয়তন ০.২-১.০ হেক্টরের মধ্যে হলে ব্যবস্থাপনা দিক থেকে ভালো হয়। পুকুরের গভীরতা ১.০-১.৫ মিটার রাখা ভালো। জোয়ার ভাটার পানি পরিবর্তন করা যায় এমন পুকুর কাঁকড়া চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। পুকুর শুকানোর পর পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। পুকুরে পানি প্রবেশ ও নির্গমনের জন্য পৃথক গেট থাকলে ভালো হয়। কাঁকড়ার পলায়ন স্বভাব রোধকল্পে পুকুরের চারদিকে বানা দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে। খরচ কমানের জন্য বানার পরিবর্তে নাইলন নেটও ব্যবহার করা যায়। মাটির পিএইচের ওপর ভিত্তি করে গুঁড়া করা পাথুরে চুন সারা পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। মাটির পিএইচ ৭-৭.৫ এর মধ্যে হলে হেক্টরপ্রতি ১২৫ কেজি চুন দিতে হবে। চুন প্রয়োগের এক দিনের মধ্যেই পুকুরের পানি তুলে ফেলতে হবে এবং ৭ দিন পর হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ কেজি ইউরিয়া এবং ১৫ কেজি টিএসপি সার ছিটিয়ে দিতে হবে। অজৈব সার প্রয়োগের ৩ দিন পর হেক্টরপ্রতি ৭৫০ কেজি জৈবসার (গোবর) প্রয়োগ করতে হবে।
কাঁকড়া মজুদ
জৈবসার প্রয়োগের ৩ দিন পর কাঁকড়া মজুদ করতে হয়। বর্তমানে কাঁকড়া চাষ বলতে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণকেই বোঝায়। কিশোর কাঁকড়া বাঁশের চাই বা ফাঁদ, পাতা জাল, থলে জাল দিয়ে ধরা যায়। ২০-৪০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী ও পুরুষ কাঁকড়া মজুদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে স্ত্রী ও পুরুষের অনুপাত হলো ৯:১ বা ৯০% স্ত্রী এবং ১০% পুরুষ কাঁকড়া মজুদ করা হলে ভালো হয়। রপ্তানির জন্য গোনাড বিশিষ্ট স্ত্রী কাঁকড়াগুলো শনাক্ত করতে হয়। সংখ্যার দিক দিয়ে হেক্টরপ্রতি স্ত্রী ও পুরুষ কাঁকড়া প্রতি হেক্টরে মজুদের হার হলো আট থেকে দশ হাজার। কাঁকড়া সাধারণত বাঁধন কেটে বিকেল বেলা মজুদ করতে হয়।
খাদ্য প্রয়োগ
কাঁকড়া সর্বভুক প্রাণী। কাঁকড়া সাধারণত মাংসাশী জলজ প্রাণী। শামুক, ঝিনুক, ছোট কাঁকড়া এবং ছোট মাছ কাঁকড়ার প্রিয় খাবার। শামুক ঝিনুকের নরম মাংসল অংশ খেয়ে কাঁকড়ার গোনাড দ্রুত তৈরি হয়, তাছাড়া খরচও কম পড়ে। তবে শামুক ঝিনুকের বহুবিধ ব্যবহার যেমন- গলদা চিংড়ি, গামুর ও হাঁসের খাবার হিসেবে ব্যবহার এবং সর্বোপরি অঞ্চলভিত্তিক অপর্যাপ্ত প্রাপ্ততার জন্য এগুলো সর্বত্র ব্যবহার সম্ভব হয়ে ওঠে না। গবেষণাপ্রাপ্ত ফলে জানা যায়, সস্তা ও সহজলভ্যতার দিক দিয়ে মাছ ট্রাশ ফিশের বিকল্প খাবার হিসেবে আংশিকভাবে গরু ছাগলের ভুঁড়ি ও চিংড়ির মাথা (মাংসল অংশ) ফ্যাটিনিংয়ের বিভিন্ন অনুপাতে কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমন- গরু-ছাগলের ভুঁড়ি ৫০-৭০% এবং ট্রাশ ফিশ ২৫-৫০%, চিংড়ির মাথা ৫০%। গবেষণাপ্রাপ্ত ফলে জানা যায়, এ খাদ্যানুপাতগুলোতে স্ত্রী কাঁকড়ার গোনাড সম্পূর্ণভাবে তৈরি হতে সময় লাগে ১৭-২১ দিন। ওই খাদ্য অনুপাতগুলোর যে কোনো একটি প্রথম দিকে প্রতিদিন কাঁকড়ার দৈহিক ওজনের ৮% হারে এবং শেষের দিকে ৫% হারে সরবরাহ করতে হবে। খাবার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৩ ভাগ করে ১ ভাগ খাবার খুব ভোরে এবং অবশিষ্ট ২ ভাগ সন্ধ্যায় পুকুরে সরবরাহ করতে হবে।
পানি ব্যবস্থাপনা
কাঁকড়ার পুকুরে খাবার হিসেবে প্রচুর পরিমাণে প্রাণিজ মাংস সরবরাহ করতে হয়। যা দ্রুত পচনশীল, তাই কাঁকড়ার পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কাঁকড়ার ফ্যাটিনিংয়ের সময় পানির গুণাগুণ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। অতিরিক্ত খাবার সরবরাহ করা হলেও পানি নষ্ট হতে পারে। পানির গুণাগুণ ভালো রাখতে হলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার জোয়ারের সময় পুকুরের পানি কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়।
কাঁকড়া মজুদের ১০ দিন পর থেকেই কাঁকড়ার গোনাড সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়েছে কিনা তা ২-৩ দিন পর পর পরীক্ষা করতে হবে। কাঁকড়াকে বৈদ্যুতিক বাল্বের সম্মুখে ধরে দেখতে হবে কাঁকড়ার দেহের ভেতর দিকে কোনো আলো অতিক্রম করে কি না। যদি আলো অতিক্রম না করে তা হলে বুঝতে হবে কাঁকড়ার গোনাড সম্পূর্ণভাব তৈরি হয়েছে। তাছাড়া গোনাড সম্পূর্ণভাবে তৈরি হলে পুকুরে পানি উঠানোর সময় কাঁকড়া গেটের কাছে এসে ভিড় জমায়।
আহরণ ও বাজারজাতকরণ
কাঁকড়া মজুদের ৩-৪ মাস পর আহরণ করা যায়। আমাদের দেশে মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কাঁকড়া আহরণের উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময় পানির গুণাগুণ ও তাপমাত্রা উপযুক্ত পর্যায়ে থাকে।  কাঁকড়া ধরার আগেই পুকুরে খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া স্ত্রী কাঁকড়ার গোনাড তৈরি হলে আহরণ করতে হবে। কাঁকড়া আহরণের লক্ষ্যে পুকুরে পানি প্রবেশ করাতে হবে যাতে কাঁকড়া স্রোতের বিপরীতে গেটের কাছে এসে ভিড় করে। এ সময়ে থোপা (লাঠির মাথায় সুতা দিয়ে বাঁধা মাছের মাথা, ব্যাঙ বা গরু-ছাগলের চামড়াকে স্থানীয় ভাষায় থোপা বলে) দিয়ে কাঁকড়াকে প্রলুব্ধ করে হাতজাল দিয়ে ধরতে হবে। কাঁকড়া ধরার সাথে সাথে বিশেষ নিয়মে কাঁকড়ার পাসহ বেঁধে ফেলতে হবে। ধৃত কাঁকড়া ডিপোতে বাছাই করে গ্রেডিং অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে।
কাঁকড়া চাষের উপযুক্ত পরিবেশ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় চাষ করা গেলে প্রতি কেজি কাঁকড়া অধিক মূল্যে বিক্রি করা যায়। বা বিদেশে রপ্তানি করে আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উপযুক্ত কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় কাঁকড়া সম্পদকে লাভজনক শিল্পে পরিণত করা যাবে।

বিমল চন্দ্র সরকার*
* সাবেক সহকারী তথ্য অফিসার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, আঞ্চলিক অফিস, বরিশাল, মোবাইল : ০১৭১৮-৫০৬৭৬১


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon